ফ্রিজ ঠান্ডা না হওয়া একটি সাধারণ সমস্যা যা প্রায় মানুষেই এটির মুখোমুখি হন। গ্রীষ্মকাল আসতেই প্রতিটি বাড়িতেই ফ্রিজ কম-বেশ প্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছে। শীতকালে ফ্রিজের ব্যবহার কম হলেও গ্রীষ্মকালে প্রায় সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ফ্রিজ চলতেই থাকে।
এটি খাবার নষ্ট হওয়া থেকে শুরু করে বিদ্যুৎ বিল বৃদ্ধি পর্যন্ত নানা ধরনের সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। তবে চিন্তার কোন কারণ নেই, কেননা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব হয়। তাহলে, আসুন জেনে নেই ফ্রিজ ঠান্ডা না হওয়ার প্রধান কারণগুলি এবং কিভাবে এইগুলো সমাধান করবেন।

ফ্রিজ ঠান্ডা না হওয়ার কারণ
ফ্রিজ ঠান্ডা না হওয়ার পিছনে অনেক কারণ থাকতে পারে, দেখে নিন সব সমস্যার কারণঃ
- বিদ্যুৎ সংযোগে সমস্যা হলে
- থার্মোস্ট্যাট সেটিং ভুল হলে
- ফ্রিজের ডোর ঠিকমতো বন্ধ না হলে / রাবার সিল কোন কারণে নষ্ট হলে
- এভাপোরেটর কয়েল জমে গেলে বা ফ্রস্ট জমা হলে
- কুলিং ফ্যান (Evaporator Fan) কাজ না করলে
- কম্প্রেসার কাজ না করলে
- গ্যাস লিক বা রেফ্রিজারেন্ট কমে গেলে
- ফ্রিজ ওভারলোড হয়ে গেলে / খাবার বেশি সংরক্ষণ করলে
- ফ্রিজের বয়স বেশি হলে বা সার্ভিসিং করা না হলে
১. বিদ্যুৎ সংযোগে সমস্যা
অনেক সময় দেখা যায় বিদ্যুৎ থাকার পরও প্লাগ বা মাল্টিপ্লাগ এর কানেকশন ঠিকমতো কাজ না করায় ফ্রিজ চালু হয় না।
তো এই সমস্যা যাচাই করার জন্য প্রথমেই নিশ্চিত হয়ে নিবেন যে, আপনার ফ্রিজে আলো জ্বলছে কিনা! আলো না জ্বললে সম্ভবত বিদ্যুৎ সংযোগে কোন সমস্যা হতে পারে।
এটির সমাধানঃ অন্য সকেটে প্লাগ বা মাল্টিপ্লাগ এর কানেকশন দিয়ে চেক করুন অথবা মাল্টিপ্লাগ পরিবর্তন করুন।
২.থার্মোস্ট্যাট সেটিং ভুল
আমরা অনেকেই ফ্রিজের থার্মোস্ট্যাট ভুলভাবে সেট করে থাকি, যার ফলে ফ্রিজ সঠিকভাবে ঠান্ডা হয় না। যদি থার্মোস্ট্যাট কম করে রাখেন তাহলে ফ্রিজ খুব কম ঠান্ডা হবে বা একেবারে নাও হতে পারে। ফ্রিজের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য থার্মোস্ট্যাট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটা যন্ত্র।
এটির সমাধানঃ থার্মোস্ট্যাট বা temperature control knob মাঝারি বা উচ্চ লেভেলে সেট করে রাখুন। আদর্শ তাপমাত্রা হচ্ছে ০-৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা ৩২-৪০ ডিগ্রি ফারেনহাইট, যা আপনিও ব্যবহার বা সেট করে রাখতে পারেন।
৩. ফ্রিজের ডোর ঠিকমতো বন্ধ না হওয়া
ফ্রিজ ঠান্ডা না হওয়ার কারণ হিসেবে এটাকেও ধরা হয়,কেননা ফ্রিজের ডোর সঠিকভাবে বন্ধ না হলে ঠান্ডা বাতাস বাইরে চলে যায়। আবার রাবার গ্যাসকেট (seal) নষ্ট হলে সেটাও অনেক সময় সমস্যা করে।
এটা চিহ্নিত করার জন্য কাগজের টুকরা ডোরে আটকে দিয়ে চেক করুন যে,ফ্রিজের ডোর ঠিকমতো চেপে ধরে কি না।
৪.এভাপোরেটর কয়েল জমে যাওয়া বা ফ্রস্ট জমা হওয়া
ফ্রিজ দীর্ঘদিন ব্যবহারে ফ্রিজের ভেতরের কয়েলে বরফ জমে যায়, এর ফলে ঠান্ডা বাতাস চলাচলে বাধা সৃষ্টি হয়।
সমাধানঃ
- ফ্রিজটি দৈনিক ৮-১০ ঘণ্টা আনপ্লাগ করে রাখুন যাতে বরফ গলে যায়।
- তারপর আবার চালু করুন।
- যদি বারবার বরফ জমে, তাহলে Defrost system বা heater সমস্যা থাকতে পারে। এক্ষেত্রে অবশ্যই টেকনিশিয়ানের সাহায্য নিন।
৫.কুলিং ফ্যান (Evaporator Fan) কাজ না করা
যেহেতু কুলিং ফ্যান বা Evaporator Fan ফ্রিজের ভেতরে ঠান্ডা বাতাস ছড়িয়ে দেওয়ার কাজ করে। তাই এটি কাজ না করলে ফ্রিজ ঠান্ডা হয় না।
এটা চিহ্নিত করার জন্য ফ্রিজ চালু থাকা অবস্থায় ফ্যানের শব্দ শুনুন। যদি না শোনেন, তাহলে অনুমান করতে পারেন যে ফ্যান নষ্ট হতে পারে।
এটার সমাধানঃ ফ্যান পরিবর্তন করতে হবে। প্রয়োজনে ইলেকট্রিশিয়ানের সাহায্য নিন।
৬.কম্প্রেসার কাজ না করা
ফ্রিজের মূল কুলিং সিস্টেমই হলো কম্প্রেসার। যদি এটি কাজ না করে তাহলে ফ্রিজ ঠান্ডা হবে না।
এটা যাচাই করার জন্য ফ্রিজের পেছনে কান পেতে শুনুন যে কোন গড়গড় শব্দ করছে কিনা ! এটি একদম নিঃশব্দ থাকলে অনুমান করতে পারেন যে এটি বন্ধ বা কাজ করতেছে না।
সমাধানঃ আপনার ফ্রিজের কম্প্রেসার নষ্ট হলে টেকনিশিয়ান দ্বারা পরীক্ষা করাতে হবে। কখনো কখনো রিলে বা ক্যাপাসিটর চেঞ্জ করলেই এটি ঠিক হয়। তবে এটা সব ক্ষেত্রে বা সব সময় নয়।
৭.গ্যাস লিক বা রেফ্রিজারেন্ট কমে যাওয়া
ফ্রিজের মধ্যে কুলিং সিস্টেমে গ্যাস (refrigerant) থাকে। এটি কোন কারনে লিক হলে ফ্রিজ ঠান্ডা হবে না।
এটা যাচাই করার জন্য ফ্রিজের পেছনের পাইপ চেক করবেন যে এটি ঠান্ডা হয়েছে কিনা অথবা লিকেজের শব্দ বা তেলের দাগ আছে কিনা ! যদি থাকে তাহলে বুঝবেন গ্যাস কমে গেছে।
সমাধানঃ
- সার্ভিসিং সেন্টার থেকে গ্যাস ভরতে হবে।
- গ্যাসকেট পরীক্ষা করুন যে কোনো ফাটল বা ক্ষয় আছে কিনা
- কোন ময়লা থাকলে বা জমলে গরম পানি বা সাবান পানি দিয়ে তা পরিষ্কার করুন
- এটি ক্ষতিগ্রস্ত হলে নতুন গ্যাসকেট লাগান
৮.ফ্রিজ ওভারলোড হওয়া
ফ্রিজে খুব বেশি খাবার রাখলে বাতাস চলাচলে সমস্যা তৈরি হয় এবং খাবার ঠান্ডা হতে দেরি হয়।
সমাধানঃ ফ্রিজে পর্যাপ্ত জায়গা রেখে খাবার বা অন্যান্য জিনিস রাখুন, যেন বাতাস চলাচল করতে পারে।
৯.ফ্রিজের বয়স বেশি হওয়া
সাধারণত ৮-১০ বছরের বেশি বা সমান বা পুরাতন ফ্রিজে নানা ধরনের যান্ত্রিক সমস্যা দেখা যায়।
সমাধানঃ নিয়মিত সার্ভিসিং করুন, প্রয়োজনে নতুন ফ্রিজ কিনতে পারেন।

ফ্রিজ রক্ষণাবেক্ষণের উপায়
ফ্রিজ ঠান্ডা না হওয়ার যে সমস্যা এটি এড়াতে নিয়মিত ফ্রিজের রক্ষণাবেক্ষণ জরুরি। এখানে কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপায় আলোচনা করা হলঃ
- নিয়মিত কন্ডেনসার কয়েল পরিষ্কার করা
- ফ্রিজের দরজা সিল পরীক্ষা করা ও প্রয়োজনে তা পরিবর্তন করা
- ফ্রিজের পিছনে পর্যাপ্ত জায়গা রাখা যাতে ঠিকভাবে বাতাস চলাচল করতে পারে
- ফ্রিজে অতিরিক্ত খাবার না রাখা
- নিয়মিত ফ্রিজ ডিফ্রস্ট করা
- থার্মোস্ট্যাট সেটিংস পরীক্ষা করা
প্রশ্ন ও উত্তরঃ
১.ডিপ ফ্রিজ ঠান্ডা না হওয়ার কারণ
বিদ্যুৎ সংযোগে সমস্যা, কম্প্রেসার বা গ্যাসের ত্রুটি,ফ্রিজের দরজা ঠিকভাবে বন্ধ না হওয়া, অথবা অভ্যন্তরীণ অংশে বরফ জমে বাতাস চলাচলে বাধা সৃষ্টি হওয়া।
২.হঠাৎ ফ্রিজ ঠান্ডা না হওয়ার কারণ
থার্মোস্ট্যাটের ভুল সেটিং, কম্প্রেসার কাজ না করা, ফিউজ বা সার্কিটে সমস্যা হওয়া, অথবা বিদ্যুৎ বিভ্রাটের পর ফ্রিজ পুনরায় ঠিকভাবে চালু না হওয়া।
৩.নন ফ্রস্ট ফ্রিজ ঠান্ডা না হওয়ার কারণ
ডিফ্রস্ট হিটার বা সেন্সর নষ্ট হওয়া, ফ্যান মোটর বন্ধ থাকা, এভাপোরেটর কয়েলে বরফ জমে বাতাস বন্ধ হওয়া, অথবা রেফ্রিজারেন্ট গ্যাস লিক যাওয়া।
৪.ওয়ালটন ফ্রিজ ঠান্ডা না হওয়ার কারণ
বিদ্যুৎ সংযোগে সমস্যা, থার্মোস্ট্যাট বা কম্প্রেসারের ত্রুটি, দরজার গ্যাসকেট লুজ হওয়া, অথবা রেফ্রিজারেন্ট গ্যাস লিক হয়ে যাওয়া।
ফ্রিজ ঠান্ডা না হলে কি করনীয়
আপনার ফ্রিজের এইরকম সমস্যা সমাধানের জন্য আপনাকে অবশ্যই কারণগুলো শনাক্ত করতে হবে, তারপর সে অনুযায়ী আপনাকে সকল পদক্ষেপ নিতে হবে। আপনি যদি কারন টায় শনাক্ত করতে না পারেন, তাহলে আপনি কখনোই সমস্যার সমাধান করতে পারবেন না। সুতরাং, আপনাকে বলবো ফ্রিজ ঠান্ডা না হলে আগে সমস্যা খুজে বের করুন যে কেন এমনটি হচ্ছে। তাহলে আপনি এটার সমাধান করতে পারবেন। আর আমরা সব সমস্যা গুলো নিয়ে ইতোপূর্বে আলোচনা করে আসছি